খাইরুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: রাজাপুর উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যার পর নদী লাশ ফেলে দেয়ার অভিযোগে দায়ের মামলায় স্বামীকে ৫দিনের রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। মিজান খন্দকার (৩৪) নামের ওই ব্যক্তি পালিয়ে সৌদি আরব প্রবাসে যাওয়ার পথে ঢাকায় গ্রেপ্তার হন, জানায় পুলিশ।
সোমবার দুপুরে তাকে ঝালকাঠি জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে সন্ধ্যায় শুনানী শেষে রিমান্ড মঞ্জুর হয়। গৃহবধূ সীমা আক্তার (২৪) পিরোজপুর জেলার খামকাটা গ্রামের প্রয়াত আমজেদ হোসেনের মেয়ে এবং রাজাপুর বাঁশতলা গ্রামের কাশেম খন্দকারের ছেলে মিজান খন্দকারের দ্বিতীয় স্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাতে তাকে রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামে হত্যার পর মরাদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে গৃহবধূর সীমা আক্তরের বড়ভাই মাজেদুর ইসলাম মামলায় অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ এখনও তার বা মরদেহের সন্ধান করতে পারেনি।
রোববার (০২মার্চ) রাতে সীমা ভাই রাজাপুর থানায় ৪ জনকে আসামী করে এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন (মামলা নম্বর-০১)। আসামীরা হলেন, সীমা আক্তারের স্বামী মিজান খন্দকার, দেবর সবুজ খন্দকার, ননদ শাহনাজ বেগম ও ননদের স্বামী অটোরিকশা চালক মিজান হাওলাদার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম রুবাইয়া আমেনার আদালতে মামলার প্রধান আসামীকে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করি। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এছাড়া এ মামলায় গ্রেপ্তার ৪ নম্বর আসামী অটোরিকশা চালক মিজান হাওলাদারকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সে আদালতকে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহার উল্লেখ করে উপপরিদর্শক আবুল কালাম আরও জানান, তিন বছর আগে সীমার সাথে সৌদি প্রবাসী মিজান খন্দকারের বিয়ে হয়। মিজানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী থাকায় সীমা রাজাপুরে মিজানের বাড়িতে কখনো আসেনি।
গত মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাজাপুরে আলাদা বাসাভাড়া করা হয়েছে বলে সীমাকে তার বাবার বাড়ি পিরোজপুর থেকে রাজাপুরে নিয়ে আসে স্বামী মিজান। সবশেষ ৩০ মার্চ সীমা মুঠোফোনে ভাই বাদশাকে জানায়, সে বিপদের মধ্যে রয়েছে। এরপর সীমার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি।
এর দুইদিন পর ০১ এপ্রিল সীমার পরিবারকে পিরোজপুর থানা পুলিশ ঢাকা মতিঝিল থানা পুলিশের বরাত দিয়ে জানায়, সীমাকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগে স্বামী মিজানকে এনায়েত গোমস্তা নামে এক ব্যক্তি আটক করে ঢাকা মতিঝিল থানায় সোপর্দ করেছে।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সীমাকে হত্যা করার পর স্বামী মিজান বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এনায়েতের সহযোগীতায় মতিঝিল থানা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হয় মিজান। এনায়েতা গোমস্তা ও মিজান দুজনেই সৌদি প্রবাসী। আর সেই সুবাদে তারা বন্ধু। মিজান স্ত্রী সীমাকে ভাড়া বাসায় না উঠিয়ে সাউথপুর গ্রামে এনায়েতের বাড়িতে ওঠায়। ঘটনার রাতে সীমা অসুস্থ বলে অটোরিকশা ডেকে সীমাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ার কথা কলে চলে যায় মিজান ও তার ভগ্নিপতি। সকালে সীমার খোঁজ নিতে হাসপাতালে গিয়ে সেখানে সীমাকে না পেয়ে না পেয়ে সন্দেহ হয় এনায়েতের। পরে এনায়েত মিজানের খোঁজে ঢাকায় গিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয় মিজানকে।
অটোরিকশা চালক মিজান রাজাপুর থানা হাজতে পুলিশকে বলেন, সীমা অসুস্থ্য এ খবর দিয়ে গত ৩০ মাচ রাত ৪টার দিকে আমাকে অটোরিকশা নিয়ে আসতে বলে মিজান। সেই রাতেই অটোরিকশাযোগে সীমাকে উপজেলার সাউথপুর থেকে শ্যালক মিজানের বাড়ি বাঁশতলায় দিয়ে আসি আমি। এরপর আমার আর কিছু জানা নেই।
এদিকে সীমাকে হত্যা করে বিশখালি নদীতে মরাদেহ ফেলে দেয়া হয়েছে বলে মামলায় গৃহবধূর ভাই অভিযোগ করেছেন। তবে ৪দিনেও তার মরাদেহের সন্ধান মেলেনি।
উপপরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, ওই মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার মিজান খন্দকারকে ঝালকাঠি এনে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারসহ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সীমা বা তার মৃতদেহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, বলেন তিনি।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই